সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী অবসরে যাওয়ার পর ‘গুরুতর’ কোনো অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তাঁর অবসর সুবিধা ‘আংশিক’ বা ‘সম্পূর্ণ’ বাতিল করার ক্ষমতা আছে সরকারের হাতে। বিদ্যমান আইনের এসংক্রান্ত উপধারাটি বাতিল করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

আজকের মন্ত্রিসভা বৈঠকে আইনের সংশোধন প্রস্তাব উঠছে। বৈঠকের এজেন্ডায় এপ্রিল-জুন মাসের মন্ত্রিসভা বৈঠকের ত্রৈমাসিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রতিবেদন, বার কাউন্সিল আইন এবং বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একটি চুক্তির খসড়া প্রস্তাবও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সরকারি চাকরি আইনের ‘অবসর সুবিধা স্থগিত, প্রত্যাহার ইত্যাদি’ শীর্ষক ৫১ ধারার ৪ উপধারায় বলা আছে, ‘অবসর সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি গুরুতর অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত বা কোনো গুরুতর অসদাচরণে দোষী সাব্যস্ত হইলে, কারণ দর্শাইবার যুক্তিসংগত সুযোগ প্রদান করিয়া, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাহার অবসর সুবিধা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাতিল, স্থগিত বা প্রত্যাহার করিতে পারিবে।’

উপধারাটি বাতিলের সুপারিশ আসায় উদ্বেগ জানিয়েছেন জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্ট অনেকে। তাঁরা বলছেন, এটি করা হলে দুই বছর আগে প্রণীত সরকারি কর্মচারী আইনটি আরো দুর্বল হয়ে পড়বে। তাঁদের  যুক্তি হচ্ছে, একজন সরকারি কর্মচারী কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পেনশনসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান। তিনি মারা গেলে তাঁর পরিবারও অনেক সুবিধা পায়। তাই অবসরে গেলেও তাঁদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের একটা সুযোগ থাকা দরকার, যাতে তাঁরা কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে না জড়ান।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া বলেন এই বিধান বাতিল করা কোনোভাবেই উচিত নয়। একজন কর্মচারী অবসরে যাওয়ার পর যদি জঙ্গিবাদ, ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধে যুক্ত হয়ে যান তখনও তাঁর কেন সরকারি সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখতে হবে? এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘এই উপধারাটি বড় আকারের একটি জনগোষ্ঠীকে অপরাধ না করার জন্য কাজ করছে। এটা তুলে দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘ব্রিটিশ আমল থেকে এই নিয়মটি আছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশও এটি অনুসরণ করে। আমরা কেন বাদ দেব। আমরা খারাপ বিষয়গুলো বাদ না দিয়ে ভালো দৃষ্টান্তগুলো ছেঁটে ফেলছি, এটা ঠিক না।’

প্রস্তাবিত সংশোধনে বিদ্যমান আইনের ১, ৪৮ ও ৫০ ধারায় কয়েকটি করণিক ভুল সংশোধনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। এ আইনটি কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে অন্য ছয়টি আইন রহিত করা হয়েছে। কিন্তু এই আইনের কিছু ধারা অন্তত ১০টি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য ছিল। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কোন কোন ধারাগুলো প্রযোজ্য থাকবে তা স্পষ্টীকরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল রাতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।  মন্ত্রিসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি অগ্রিম মন্তব্য করতে পারি না।